আমাদের
প্রথম পরিচয় আমরা ‘মানুষ’। ধর্মীয় পরিচয় আমরা ‘মুসলমান’। অতঃপর গুণবাচক বা
বৈশিষ্ট্যগত পরিচয় হ’ল আমরা ‘আহলেহাদীছ’। এই পরিচয়ে কোন জড়তা নেই, কোন
দ্ব্যর্থতা নেই। আমরা নির্ভেজাল তাওহীদ ও ছহীহ সুন্নাহর অনুসারী। জীবনের
কোন ক্ষেত্রেই আমরা শিরক ও বিদ‘আতের সঙ্গে আপো ষ করি না। দুনিয়া অর্জন
আমাদের লক্ষ্য নয়, আখেরাতে মুক্তিই একমাত্র লক্ষ্য। অতএব সার্বিক জীবনে
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের অনুসারী হওয়ার কারণে আমি একজন ‘আহলেহাদীছ’।
এটা আমার বৈশিষ্ট্যগত পরিচয়। ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীন এই নামে তথা
আহলুল হাদীছ, আহলুস সুন্নাহ, আহলুল আছার ইত্যাদি নামে পরিচিত ছিলেন। আমরাও
সেই নামে পরিচিত।
বিগত প্রায় দেড় হাযার বছর যাবৎ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন নামে এই আন্দোলন পরিচালিত হয়ে আসছে। যা ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। বিগত শতাব্দীতে পাকিস্তানের করাচীতে ‘জামা‘আতুল মুসলিমীন’ নামে একটি ক্ষুদ্র দল সূরা হজ্জের ৭৮ আয়াতটির অপব্যাখ্যা করে এক নতুন ফিৎনার জন্ম দেয়। যার ভিত্তিতে তারা ‘মুসলিম’ ব্যতীত ‘আহলেহাদীছ’ সহ অন্যান্য সকল বৈশিষ্ট্যগত পরিচয়কে বিদ‘আত আখ্যা দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ছহীহ আক্বীদাসম্পন্ন মুসলমানদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে বেশ বিভ্রান্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে। অনেকে আহলেহাদীছকে প্রচলিত দলাদলিমূলক ফিরক্বাসমূহেরই একটি ফিরক্বা হিসাবে ধরে নিয়েছেন। অথচ এটা একটি অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা মাত্র।
প্রকৃতপক্ষে ‘আহলুল হাদীছ’ ছাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে ছালেহীনের যুগ থেকে চলে আসা একটি বৈশিষ্ট্যগত ও পরিচিতিমূলক নাম। যা একটি বিশেষ আক্বীদা ও রীতি-পদ্ধতির প্রতিনিধিত্ব করে। সাথে সাথে শিরক ও বিদ‘আতপন্থীদের থেকে সুস্পষ্ট পার্থক্যরেখা নির্ধারণ করে।
ইসলামের প্রথম যুগে যখন কোন বিদ‘আতী ফিরক্বার জন্ম হয়নি, তখন মুসলমানদের পৃথক কোন পরিচিতির প্রয়োজন ছিল না। কিন্তু ৩৭ হিজরীর পর যখন বিভিন্ন ফিরক্বার জন্ম হয়, তখন বিদ‘আতীদের বিপরীতে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও আমলের অনুসারীগণ ‘আহলুল হাদীছ’ নামে পরিচিত হন। আজও বিদ‘আতী ফিরক্বাসমূহ রয়েছে। তাই তাদের বিপরীতে ‘আহলুল হাদীছ’ বা ‘আহলেহাদীছ’ নামও রয়েছে। অতএব এই বৈশিষ্ট্যগত নামে আপত্তির তো কোন প্রশ্নই ওঠে না, বরং ক্ষেত্রবিশেষে অপরিহার্য। নইলে অশুদ্ধ ও বিশুদ্ধ একাকার হয়ে যাবে।
পাকিস্তানের খ্যাতনামা মুহাদ্দিছ শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ এই বিভ্রান্তি দূরীকরণে ‘আহলেহাদীছ এক ছিফাতী নাম’ (اہل حديث ايك صفاتی نام) শিরোনামে উর্দূতে একটি জ্ঞানগর্ভ পুস্তক রচনা করেন। সম্প্রতি গবেষণা মাসিক ‘আত-তাহরীক’ পত্রিকায় উক্ত পুস্তিকাটির বঙ্গানুবাদ ৯ কিস্তিতে (এপ্রিল-ডিসেম্বর ২০১৫) প্রকাশিত হয় এবং যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে। অতঃপর গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা সেটিকে পৃথক গ্রন্থাকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি।
নবীন অনুবাদক জনাব আহমাদুল্লাহ পুস্তকটি উর্দূ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন এবং ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী জনাব নূরুল ইসলাম এটির সম্পাদনা করেছেন। অতঃপর মাননীয় প্রধান পরিচালকের হাতে পরিমার্জিত হয়ে বইটি প্রকাশিত হ’ল। আমরা তাঁদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তাঁদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ প্রার্থনা করছি। এই সাথে প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আল্লাহ রাববুল আলামীনের দরবারে উত্তম পারিতোষিক কামনা করছি।
বইটি যদি ‘আহলেহাদীছ’ নামকরণ সম্বন্ধে বাংলাভাষী পাঠক-পাঠিকাদের বিভ্রান্তি দূরীকরণে সমর্থ হয়, তবেই আমরা আমাদের শ্রম স্বার্থক বলে মনে করব। আল্লাহ রাববুল আলামীন দ্বীনে হকের প্রচার ও প্রসারে আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করুন- আমীন!