home

call

email

অনুবাদকের কথা

১৯৮১-৮৪ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যোহা হলের এসিস্ট্যান্ট হাউস টিউটর থাকার সময়ে হলে বসে প্রথমে ‘রাবেতা আলমে ইসলামী’ মক্কা কর্তৃক প্রকাশিত ১৪৭ পৃষ্ঠার অত্র ছোট সাইজের ইংরেজী বইটি এবং পরে কুয়েত থেকে প্রকাশিত ‘সালাফী দাওয়াতের মূলনীতি’ আরবী বইটি অনুবাদ করি (যা ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে)। অতঃপর অত্র ইংরেজী অনুবাদ বইটি প্রকাশের জন্য ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ ঢাকা অফিসে জমা দেই। যা পরে তারা ১৯৮৭ সালে প্রকাশ করে। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও বইটি বাজারে দেখতে না পেয়ে এবং ঢাকার ইফাবা অফিসে যোগাযোগ করে কোন সদুত্তর না পেয়ে ফিলিস্তীনের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাধ্য হয়ে পরিমার্জনা শেষে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ থেকে পুনরায় প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-১৯৪৫ খৃ.) জার্মানীর স্বৈরশাসক হিটলারের পরিকল্পনায় হলোকস্টে প্রায় ৬০ লাখ ইহূদীকে হত্যা করা হয়। ইউরোপ হলোকস্টের এই অপরাধ করলেও শাস্তি চাপানো হয় ফিলিস্তীনী আরবদের উপর। ১৯৪৭ সালের ২৯শে নভেম্বর সদ্য গঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে অন্যায়ভাবে ফিলিস্তীন ভূখন্ডকে ইহূদী ও আরবদের মধ্যে দুই ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। অতঃপর ১৯৪৮ সালের ১৪ই মে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটার সাথে সাথে স্বাধীন ইস্রাঈল রাষ্ট্র ঘোষিত হয়। সীমানা নির্ধারিত হয় জাতিসংঘের প্রস্তাব অনুসারে। যাতে লাখ লাখ ফিলিস্তীনীর উপর নেমে আসে মাতৃভূমি হ’তে বহিষ্কারের মহা বিপর্যয়। হাযার বছর ধরে বসবাসকারী প্রায় ১০ লাখের অধিক আরব মুসলিম বিতাড়িত হয়ে পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্র সমূহে স্থায়ীভাবে উদ্বাস্ত্ত হয়ে পড়ে। বর্তমানে যা ৫০ লাখের উপরে দাঁড়িয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের তৈল লুট করা ও সেখানকার মুসলিম রাষ্ট্রগুলির উপর ছড়ি ঘুরানোর কপট উদ্দেশ্যে ইঙ্গ-মার্কিন চক্রান্তে ও আন্তর্জাতিক ইসলাম বৈরী শক্তিগুলির যৌথ ষড়যন্ত্রে ১৯৪৮ সালের ১৫ই মে মধ্যপ্রাচ্যের বুকে কথিত ইস্রাঈল রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া হয়। সাধারণ ইহূদীদেরকে ধোঁকা দেওয়ার জন্য একটি হিব্রু উপাখ্যান (Myth) বা সনাতন ধর্মচেতনাকে কাজে লাগানো হয়। যার পিছনে কোন সত্য নেই। আর তা হ’ল ইহূদীদের জন্য ফিলিস্তীন হ’ল ‘ঈশ্বরের প্রতিশ্রুত ভূমি’ (Promised land)। অথচ তাদের নবী মূসা (আঃ) যখন তাদেরকে সেখানে প্রবেশ করতে বলেছিলেন, তখন তারা অস্বীকার করে বলেছিল, ‘তুমি ও তোমার প্রভু (আল্লাহ) যাও ও যুদ্ধ কর গে। আমরা এখানে বসে রইলাম’ (মায়েদাহ ৫/২৪)।  

আনুষ্ঠানিকভাবে ইস্রাঈল রাষ্ট্র জন্মলাভের ঠিক ৭০ বছর পরে ২০১৮ সালের ১৫ই মে তেলআবিব থেকে আমেরিকান দূতাবাস জেরুযালেমে স্থানান্তর করা হ’ল। পুরা জেরুযালেমের উপরে ইহূদীদের দাবী পূর্ণতা লাভের পথে ইস্রাঈল একধাপ এগিয়ে গেল। এভাবে মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা দখল করার পর তারা মদীনা ও কা‘বা দখলের দিকে এগিয়ে যাবে। ১৯৬৭ সালের ৬ই জুন ইস্রাঈল জেরুযালেমের প্রাচীন নগরী অধিকার করে। তার পরপরই প্রধান পুরোহিতের নেতৃত্বে ইস্রাঈলী প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীবর্গ বিলাপরত প্রাচীরের (Wailing wall) দিকে মার্চ করে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মোশে দায়ান ঘোষণা করেন, The way to Medina and Mecca is now open to us. ‘মদীনা ও মক্কা দখলের পথ এখন আমাদের জন্য উন্মুক্ত’। একই দিনে তারা মসজিদের চার দেওয়ালের মাঝখানে অত্যন্ত নির্লজ্জভাবে নাচ-গানের মাধ্যমে এর পবিত্রতা বিনষ্ট করে (ইন্নালিল্লাহ...)। আজও সেখানে আমেরিকান দূতাবাস উদ্বোধনের দিন একই নির্লজ্জ দৃশ্য দেখা গেল।

লেখক মাহমূদ শীছ খাত্ত্বাব নিজেই ১৯৪৮ সালে ইরাকী সেনাবাহিনীর অন্যতম সেনানায়ক হিসাবে ইস্রাঈলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। ফলে স্বীয় অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি অত্যন্ত সুন্দরভাবে ইহূদী পরিকল্পনা, আগ্রাসন ও ধ্বংসযজ্ঞ, তার দার্শনিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক তৎপরতার সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেছেন এবং এক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহর করণীয় তুলে ধরেছেন।

এই সঙ্গে কারা নির্যাতিত এই পন্ডিত লেখকের সংগ্রাম মুখর জীবনী সংযুক্ত করা হ’ল।

আশা করি, বাংলাভাষী পাঠক সমাজ এ বই থেকে আরব বিশ্বে ইস্রাঈলের আগ্রাসী নীল নকশা পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন এবং ফিলিস্তীনী মযলূম ভাই-বোনদের প্রতি তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন।

‘হে আল্লাহ! তুমি মুসলিম বিশ্বকে যোগ্য নেতা দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে মযলূম উম্মাহর মুক্তির জন্য উত্তম সাহায্যকারী পাঠিয়ে দাও!’ পরিশেষে দরূদ ও সালাম বর্ষিত হৌক শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর পরিবারবর্গ এবং ছাহাবায়ে কেরামের প্রতি।