মুমিনের দৈনন্দিন জীবনের যুগ-জিজ্ঞাসার জবাবে ছহীহ দলীলের ভিত্তিতে শরী‘আতের বিধান সমূহ বর্ণনা করাকে ‘ফৎওয়া’ (الفتوي) বলে। পবিত্র কুরআনের ৫টি সূরায় ৯টি আয়াতে ‘ফৎওয়া’ শব্দটি এসেছে।[1] আল্লাহ বলেন, وَيَسْتَفْتُونَكَ فِي النِّسَاءِ قُلِ اللهُ يُفْتِيكُمْ فِيهِنَّ ‘তারা তোমার নিকট নারীদের সম্বন্ধে বিধান জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলে দাও আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের সম্পর্কে বিধান দিয়েছেন...’ (নিসা ৪/১২৭)। তিনি আরও বলেন, يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلاَلَةِ ‘লোকেরা তোমার নিকট ফৎওয়া চাচ্ছে। তুমি বলে দাও, আল্লাহ তোমাদেরকে কালালাহ’-র সম্পত্তি বণ্টন সম্পর্কে ফৎওয়া দিচ্ছেন’ (নিসা ৪/১৭৬)।
হাদীছে এসেছে, জনৈক বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল! إِنَّ لِى كِلاَبًا مُكَلَّبَةً فَأَفْتِنِى فِى صَيْدِهَا ‘আমার প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত কয়েকটি কুকুর রয়েছে। এক্ষণে তাদের শিকার খাওয়া যাবে কি-না, সে বিষয়ে আপনি আমাকে ফৎওয়া দিন’।... أَفْتِنِى فِى قَوْسِى ‘আমার নিক্ষিপ্ত তীরের শিকার খাওয়া যাবে কি-না...। أَفْتِنِى فِى آنِيَةِ الْمَجُوسِ ‘বাধ্যগত অবস্থায় মজূসীদের পাত্রে খাওয়া যাবে কি-না... (আবুদাঊদ হা/২৮৫৭)। এমনিভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আল্লাহ প্রদত্ত অহি-র আলোকে অসংখ্য ফৎওয়া প্রদান করেছেন। পরবর্তীতে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে এযাম, তাবে তাবেঈন এবং খলীফাদের আমলে ফৎওয়া প্রদান অব্যাহত ছিল। উম্মতের সংখ্যা বৃদ্ধিতে ফৎওয়ার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং পাবে এটাই স্বাভাবিক।
মাসিক আত-তাহরীক ১৯৯৭ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে তার যাত্রার শুরু হ’তে ‘প্রশ্নোত্তর’ কলামে নিয়মিতভাবে ফৎওয়া প্রদান করে আসছে। পত্রিকাটি তার নীতি অনুযায়ী সর্বদা পবিত্র কুরআন, ছহীহ হাদীছ ও সালাফে ছালেহীনের বুঝ অনুযায়ী ফৎওয়া দিয়ে থাকে।
আত-তাহরীক বিনা দলীলে কোন ফৎওয়া দেয় না। পাশাপাশি জাল ও যঈফ হাদীছ থেকে নিজেকে বিরত রাখে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) স্বীয় উম্মতকে সাবধান করে গিয়েছেন, مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি ইচছাকৃতভাবে আমার উপর মিথ্যারোপ করল, সে যেন জাহান্নামে তার ঠিকানা করে নিল’ (বুখারী হা/৩৪৬১; মিশকাত হা/১৯৮, আব্দুল্লাহ বিন ‘আমর হ’তে)।
‘আত-তাহরীক’ ১ম সংখ্যা মাত্র ৩টি ফৎওয়া দিয়ে শুরু হয়। অতঃপর বৃদ্ধি পেতে পেতে ২০০৩ সালের জানুয়ারী থেকে নিয়মিতভাবে প্রতি মাসে ৪০টি করে প্রশ্নোত্তর দেওয়া হচ্ছে। যার সংখ্যা পুনরুল্লেখ সহ ফেব্রুয়ারী’১৮ পর্যন্ত মোট ৮৮৩০টিতে উন্নীত হয়েছে।
শুরুতে আত-তাহরীক এর কোন ফৎওয়া বোর্ড ছিল না। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব পরে ফৎওয়া বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সে লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর পরিচালনা কমিটির বৈঠকে ‘দারুল ইফতা’ নামে ৮ সদস্য বিশিষ্ট ফৎওয়া বোর্ড গঠিত হয়।
উল্লেখ্য যে, প্রথম গঠিত ফৎওয়া বোর্ডের সদস্যদের অনেকেই এখন সদস্য নেই। অনেকেই মারা গেছেন। বর্তমানে অনেকে বিদেশে থেকেও কেন্দ্র থেকে প্রেরিত ফৎওয়া সমূহের উত্তর লিখে ই-মেইলে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এভাবে বর্তমানে ৭ সদস্য বিশিষ্ট ফৎওয়া বোর্ড কাজ করে যাচ্ছে। এতদ্ব্যতীত ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন গবেষণা বিভাগে’র গবেষণা সহকারীগণ সার্বিকভাবে ফৎওয়া বোর্ডকে সহযোগিতা করে থাকেন। যা ২০১০ সালের ১লা ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ফালিল্লাহিল হাম্দ।
আত-তাহরীকে প্রকাশিত ফৎওয়াসমূহ পৃথকভাবে সংকলন আকারে প্রকাশ করার বিষয়টি ছিল পাঠকদের বহু দিনের চাহিদা। কিন্তু নানা ব্যস্ততায় এতদিন তা পূরণ করা সম্ভব হয়নি। গত বছর ১৯তম বর্ষ দ্বারা আমাদের ‘ফৎওয়া সংকলন’-এর যাত্রা শুরু হওয়ার পর এবছর ১৮তম বর্ষের ৪৮০টি ফৎওয়া প্রকাশ করা হ’ল। এরপর থেকে পিছনের বর্ষ সমূহের ফৎওয়াগুলি নিয়মিতভাবে খন্ডাকারে প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ।
সংকলিত ফৎওয়াগুলি সাধ্যমত বিশুদ্ধ করা হয়েছে। এরপরেও আমাদের ভুল থাকবে। পাঠকদের নিকট কোন ভুল ধরা পড়লে জানিয়ে বাধিত করবেন। পরবর্তী সংস্করণে তা সংশোধন করা হবে ইনশাআল্লাহ।
‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর দারুল ইফতা-র সাবেক ও বর্তমান সদস্যগণ এবং গবেষণা বিভাগ ও প্রকাশনার সাথে জড়িত সকলকে আল্লাহ ইহকালে ও পরকালে উত্তম জাযা দান করুন- আমীন!
পরিশেষে আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা। অতঃপর তাঁর শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এবং তাঁর পরিবারবর্গ ও ছাহাবীগণের প্রতি রইল অসংখ্য দরূদ ও সালাম।
-প্রকাশক
[1]. নিসা ৪/১২৭, ১৭৬; ইউসুফ ১২/৪১, ৪৩, ৪৬; কাহফ ১৮/২২; নমল ২৭/৩২; ছাফফাত ৩৭/১১, ১৪৯।