بسم الله الرحمن الرحيم
নির্ভেজাল
ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় বাধা হ’ল তাক্বলীদে শাখছী বা
অন্ধ ব্যক্তিপূজা। এর ফলে মানুষ আর একজন মানুষের অন্ধ অনুসারী হয়ে পড়ে।
অনুসরণীয় ব্যক্তির ভুল-শুদ্ধ সব কিছুকেই সে সঠিক মনে করে। এমনকি তার যে কোন
ভুল হ’তে পারে এই ধারণাটুকুও অনেক সময় ভক্তের মধ্যে লোপ পায়।
মানুষ যুগে যুগে কখনো তার বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা রসম-রেওয়াজের অনুসারী হয়েছে, কখনো কোন সাধু ব্যক্তি অথবা ধর্মনেতা ও সমাজনেতাদের অনুসারী হয়েছে। ফলে নবীদের মাধ্যমে আল্লাহ প্রেরিত অভ্রান্ত সত্যকে সত্য বলে স্বীকার করেও অনেকে তা মানতে ব্যর্থ হয়েছে শুধুমাত্র তাক্বলীদী গোঁড়ামীর কারণে। বলা বাহুল্য প্রত্যেক নবীকেই স্ব স্ব সমাজের প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠানের মুকাবিলা করতে হয়েছে। আল্লাহ প্রেরিত ‘অহি’র সত্যকে প্রচার করতে গিয়ে সমাজের লালিত সত্যের (?) বিরোধিতা করতে হয়েছে। ফলে কখনো তাঁদের মার খেতে হয়েছে, কখনো অগ্নি পরীক্ষা দিতে হয়েছে, কখনো দেশ ছাড়তে হয়েছে, কখনো জীবন দিতে হয়েছে। পবিত্র কুরআনে এই মর্মে বহু আয়াত বর্ণিত হয়েছে। যেমন হযরত নূহ (আঃ) যখন তাঁর কওমকে আল্লাহর ইবাদত ও নবীর অনুসরণের আহবান জানালেন, তখন তারা তা মানতে অস্বীকার করল এবং যাতে তারা তাদের অনুসরণীয় ধর্মনেতা অদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়া‘ঊক্ব, নাস্র প্রমুখের অনুসরণ থেকে বিরত না হয়, সেজন্য যিদ করল (নূহ ৭১/২৩)। সুদীর্ঘ সাড়ে নয়শত বছর পরম ধৈর্যের সঙ্গে দাওয়াত দিয়ে (অনধিক মাত্র চল্লিশ বা আশি জনের) মুষ্টিমেয় কয়েকজন ভাগ্যবান ব্যক্তি নবীর আহবানে সাড়া দেন। বাকী সবাই প্রচলিত তাক্বলীদী কুসংস্কারের জালে আবদ্ধ থাকে। অবশেষে আল্লাহর পক্ষ হ’তে পাঠানো প্লাবনের গযবে দুনিয়া গারত হয়ে যায়।
পরবর্তীকালে পিতা ইবরাহীম, মূসা, ঈসা ও আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহে ওয়া সাল্লাম) সকলকেই এই তাক্বলীদী গোঁড়ামীর মুকাবিলা করতে হয়েছে। প্রত্যেক নবীর কওম স্ব স্ব বাপ-দাদার দোহাই পেড়ে নবীর আনীত সত্যকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘যখন তাদের বলা হয়, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তা অনুসরণ কর। তখন তারা বলে, বরং আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের যে বিষয়ের উপর পেয়েছি, তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তির দিকে আহবান করে, তবুও কি তারা এটা বলবে?’ (লোকমান ৩১/২১; বাক্বারাহ ২/১৭০)।
পাকিস্তানের খ্যাতনামা মুহাদ্দিছ শায়খ যুবায়ের আলী যাঈ তাক্বলীদের অসারতা প্রমাণে ‘দ্বীন মেঁ তাক্বলীদ কা মাসআলা’ (دين ميں تقليد كا مسئلہ) শিরোনামে উর্দূতে একটি জ্ঞানগর্ভ পুস্তক রচনা করেন। সম্প্রতি গবেষণা মাসিক ‘আত-তাহরীক’ পত্রিকায় উক্ত পুস্তিকাটির বঙ্গানুবাদ ৫ কিস্তিতে (নভেম্বর-ডিসেম্বর’১৬ এবং জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী ও মে’১৭) প্রকাশিত হয় এবং যথেষ্ট জনপ্রিয়তা লাভ করে। অতঃপর গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা সেটিকে পৃথক গ্রন্থাকারে প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা সাধারণ পাঠকদের বোধগম্যের সুবিধার্থে উক্ত গ্রন্থের কিছু গুরুগম্ভীর ও জটিল আলোচনা (পৃঃ ৫২-৮০) বাদ দিয়েছি।
নবীন অনুবাদক আহমাদুল্লাহ পুস্তকটি উর্দূ থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন এবং ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম এটির সম্পাদনা করেছেন। অতঃপর মাননীয় পরিচালকের হাতে পরিমার্জিত হয়ে বইটি প্রকাশিত হ’ল। আমরা তাঁদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং তাঁদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ প্রার্থনা করছি। এই সাথে প্রকাশনা সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য আল্লাহ রববুল ‘আলামীনের দরবারে উত্তম পারিতোষিক কামনা করছি। দ্বীনে হকের প্রচার ও প্রসারে আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করুন- আমীন!