بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহর
অশেষ রহমতে আমরা সঊদী আরবের মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল-হাদীছ এন্ড
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক ড. হাফেয বিন মুহাম্মাদ
আল-হাকামী রচিত الأحاديث الواردة في لزوم الجماعة دراسة حديثية فقهية বইটির
বঙ্গানুবাদ ‘জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের অপরিহার্যতা’ সম্মানিত পাঠকদের হাতে
তুলে দিতে সক্ষম হ’লাম। ফালিল্লাহিল হাম্দ। ইতিপূর্বে মাসিক ‘আত-তাহরীক’-য়ে ধারাবাহিকভাবে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০১৫ খৃঃ)
পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখ্য যে, গ্রন্থাকারে প্রকাশের
পূর্বে বইটি সঊদী আরবের কেন্দ্রীয় দারুল ইফতার গবেষণা পত্রিকা ‘মাজাল্লাতুল
বুহূছ আল-ইসলামিইয়াহ’তে (সংখ্যা ৭৬, রজব-শাওয়াল ১৪২৬ হিঃ)
প্রকাশিত হয়। এ গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকের প্রথম অধ্যায়ে সম্মানিত লেখক
জামা‘আতকে অাঁকড়ে ধরা এবং নেতার আদেশ শ্রবণ ও মান্য করার ব্যাপারে সর্বমোট
৩০টি হাদীছ উল্লেখ করেছেন। আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপন
সম্পর্কে বর্ণিত হাদীছগুলির ফিকহী পর্যালোচনা অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে
ধরেছেন। এতে হাদীছে বর্ণিত জামা‘আতের অর্থ ও উদ্দেশ্য, কিয়ামত পর্যন্ত
হক্বপন্থী জামা‘আতের টিকে থাকা, জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের উপকারিতা প্রভৃতি
বিষয় আলোচিত হয়েছে।
মুসলিম উম্মাহকে সর্বদা জামা‘আতবদ্ধ হয়ে সুশৃংখল জীবন যাপন করার নির্দেশ দান করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন জনতা একটি বিশেষ লক্ষ্যে একজন নেতার অধীনে সংঘবদ্ধ হ’লেই তাকে ‘জামা‘আত’ বলে। জামা‘আত গঠনের প্রধান শর্ত হ’ল নেতৃত্ব ও আনুগত্য। মসজিদ ভর্তি মুছল্লী থাকলেও যদি ইমাম না থাকে, তাকে যেমন জামা‘আত বলা হয় না। তেমনি মুক্তাদীবিহীন ইমামকেও ‘ইমাম’ বলা হয় না। সেকারণ তিনজনে একটি সফরে বের হ’লেও সেখানে একজনকে ‘আমীর’ নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জামা‘আতে ছালাত হ’ল জামা‘আতবদ্ধ জীবনের দৈনন্দিন প্রশিক্ষণের অংশ। জামা‘আত চলা অবস্থায় ইমামের আনুগত্য না করলে যেমন মুক্তাদীর ছালাত কবুল হয় না, জামা‘আতবদ্ধ জীবনে আমীরের আনুগত্য না করলে হাদীছের ভাষায় তার মৃত্যু হয় জাহেলিয়াতের মৃত্যু। জামা‘আতবদ্ধ জীবন মানুষের স্বভাব ধর্মের অংশ। একে অস্বীকার করা চিরন্তন সত্যকে অস্বীকার করার ন্যায়।
পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে সর্বত্র নেতৃত্ব ও আনুগত্য রয়েছে। যা ব্যতীত সবই অচল। সেই সাথে রয়েছে আনুগত্যের বিশ্বস্ততার জন্য শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা। রয়েছে শপথ ভঙ্গে শাস্তির ব্যবস্থা। তেমনি সুশৃংখলভাবে সংগঠন পরিচালনা ও সমাজ সংস্কারের গুরু দায়িত্ব পালনের স্বার্থে রয়েছে আমীরের নিকট আল্লাহর নামে আনুগত্যের বায়‘আত গ্রহণের ব্যবস্থা। যা সাধারণ অঙ্গীকারের ঊর্ধ্বে আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত। তাই এর গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক বেশী।
একবিংশ শতাব্দীর নব্য জাহেলী যুগে মুসলমানদের টিকে থাকতে হ’লে মুসলিম উম্মাহকে সকল প্রকার ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের নিঃশর্ত অনুসরণের মাধ্যমে জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপন করতে হবে। ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম থাক বা না থাক মুসলমানদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে সর্বাবস্থায় জামা‘আত ও ‘আমীর’ থাকা যরূরী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْفُرْقَةَ ‘তোমাদের উপর জামা‘আতবদ্ধ জীবন অপরিহার্য করা হ’ল এবং বিচ্ছিন্ন জীবন নিষিদ্ধ করা হ’ল’ (তিরমিযী হা/২১৬৫)। তিনি বলেন, الْجَمَاعَةُ رَحْمَةٌ وَالْفُرْقَةُ عَذَابٌ ‘জামা‘আতবদ্ধ জীবন হ’ল রহমত এবং বিচ্ছিন্ন জীবন হ’ল আযাব’ (ছহীহাহ হা/৬৬৭)। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি মারা গেল অথচ তার গর্দানে আমীরের আনুগত্যের বায়‘আত থাকল না, সে জাহেলী হালতে মৃত্যুবরণ করল’ (মুসলিম হা/১৮৫১)। এর অর্থ সে কুফরী হালতে মৃত্যুবরণ করবে না বটে, কিন্তু তার জীবন হবে বল্গাহীন ও স্বেচ্ছাচারী জীবন। অতএব সকল প্রকার মা‘রূফ বা শরী‘আত অনুমোদিত কাজে আমীরের নির্দেশ পালন করা মামূরের জন্য ফরয। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার আমীরের আনুগত্য করল সে আমার আনুগত্য করল। আর যে ব্যক্তি আমার আমীরের অবাধ্যতা করল সে আমার অবাধ্যতা করল’ (বুখারী হা/৭১৩৭; মুসলিম হা/১৮৩৫ (৩৩)। ‘আমার আমীর’ বলার মধ্যে বুঝা যায় যে, আমীরকে অবশ্যই রাসূল (ছাঃ)-এর পদাঙ্ক অনুসারী হ’তে হবে। আর এরূপ ইমারত ও জামা‘আতের উপরে আল্লাহর হাত থাকে (নাসাঈ হা/৪০২০)। রাষ্ট্রীয় ইমারত ইসলামী হৌক বা না হৌক, তাদের প্রতিও আনুগত্য রাখতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তাদের হক তাদের দিয়ে দাও এবং তোমাদের হক আল্লাহর কাছে চাও’ (বুখারী হা/৭০৫২)। জানা আবশ্যক যে, সেদিনের মাদানী রাষ্ট্র ভেঙ্গে এখন মুসলমানরা ৫৭টি মুসলিম রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়েছে। দুনিয়াবী স্বার্থ এবং হিংসা ও অহংকারের কারণে ব্যক্তি ও সংগঠনে বিভক্তি আসতে পারে। কিন্তু কিয়ামতের আগ পর্যন্ত হকপন্থী মুমিন ও তাদের জামা‘আত থাকবে (মুসলিম হা/১৯২০)। অতএব জামা‘আতবদ্ধ জীবনের আবশ্যকতা ও আমীরের আনুগত্যের অপরিহার্যতা চিরদিন থাকবে।
‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম (নওগাঁ) বইটি সুন্দরভাবে অনুবাদ করে আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। বইটি ‘গবেষণা বিভাগ’ কর্তৃক সম্পাদিত ও পরিমার্জিত হয়েছে। বইটি বিদগ্ধ পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আমাদের একান্ত বিশ্বাস।
এ বইয়ের মাধ্যমে মুসলিম সমাজে জামা‘আতবদ্ধ জীবন-যাপনের অনুভূতি সৃষ্টি হৌক এটাই আমাদের একান্ত কামনা। আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম জাযা দান করুন- আমীন!
-প্রকাশক