بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبيّ بعده وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلي يوم الدين وبعد
পৃথিবীর
যে প্রান্তেই বিশুদ্ধ ইসলামের দাওয়াত পরিচালিত হয়েছে, সেখানেই তার
বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র হয়েছে। স্বার্থান্ধ ও দুনিয়াদার লোকেরা কোথাও
এ আন্দোলনকে মেনে নেয়নি। হক ও বাতিলের আদর্শিক লড়াইয়ে বাতিলের পরাজয়
অবশ্যম্ভাবী। ফলে যখনই মানুষ হক চিনে ফেলে ও তার দিকে আকৃষ্ট হ’তে থাকে,
তখনই উক্ত দাওয়াতকে অংকুরে বিনাশ করার জন্য সকল প্রকার চক্রান্ত হয়ে থাকে।
বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম নয়।
১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে যখনই এদেশে আহলেহাদীছ আন্দোলন-এর বিশুদ্ধ দাওয়াত শুরু হয়, তখন থেকেই এর বিরুদ্ধে ঘরে-বাইরে ষড়যন্ত্র শুরু হয়। সকল বাধা পেরিয়ে আন্দোলন যখন দ্রুত বেগবান হ’তে থাকে, তখনই ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারীতে নেমে আসে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের বিভীষিকা। যেখানে ইতিহাসের বর্বরতম অধ্যায় রচিত হয়। কিন্তু আহলেহাদীছ আন্দোলন বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত এগিয়ে চলে। সাথে সাথে চক্রান্তকারীদের নিত্য নতুন ষড়যন্ত্র বিস্তার লাভ করতে থাকে। ফলে ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদ যখন বৈশ্বিক রূপ ধারণ করেছে, ষড়যন্ত্রকারীরা তারও কিছু দায়ভার এই মহান আন্দোলন-এর উপরে চাপিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। অথচ এর বিরুদ্ধে বাংলাদেশে এই আন্দোলন-এর নেতারাই সর্বাগ্রে জাতিকে সাবধান করেছে।
জঙ্গীবাদের মূলোৎপাটন করতে চাইলে এর বিশ্বাসগত ভ্রান্তির দিকটা স্পষ্টভাবে তুলে ধরতে হবে। সেটা পরিষ্কার হ’লে আশা করি অনেকে ফিরে আসবে। যেমন ঈমানের সংজ্ঞায় মৌলিকভাবে তিনটি দল রয়েছে। খারেজী, মুরজিয়া ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত আহলেহাদীছ। আহলেহাদীছের নিকট ঈমানের সংজ্ঞা হ’ল,اَلتَّصْدِيْقُ بِالْجِنَانِ وَالْإِقْرَارُ بِالْلِسَانِ وَالْعَمَلُ بِالْأَرْكَانِ يَزِيْدُ بِالطَّاعَةِ وَيَنْقُصُ بِالْمَعْصِيَةِ، اَلْإِيْمَانُ هُوَ الْاَصْلُ وَالْعَمَلُ هُوَ الْفَرْعُ- ‘হৃদয়ে বিশ্বাস, মুখে স্বীকৃতি ও কর্মে বাস্তবায়নের নাম হ’ল ঈমান, যা আনুগত্যে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং গোনাহে হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। ঈমান হ’ল মূল এবং আমল হ’ল শাখা’। যা না থাকলে পূর্ণ মুমিন বা ইনসানে কামেল হওয়া যায় না। অতএব জনগণের ঈমান যাতে সর্বদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, পরিবার, সমাজ ও সরকারকে সর্বদা সেই পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। নইলে ঈমান হ্রাসপ্রাপ্ত হ’লে সমাজ অকল্যাণে ভরে যাবে।
খারেজীগণ বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও কর্ম তিনটিকেই ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করেন। ফলে তাদের মতে কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি কাফের ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী এবং তাদের রক্ত হালাল’। যুগে যুগে অধিকাংশ চরমপন্থী ভ্রান্ত মুসলমান এই মতের অনুসারী। পক্ষান্তরে মুরজিয়াগণ কেবল বিশ্বাস অথবা স্বীকৃতিকে ঈমানের মূল হিসাবে গণ্য করেন। যার কোন হ্রাস-বৃদ্ধি নেই। তাদের মতে আমল ঈমানের অংশ নয়। ফলে তাদের নিকট কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন। আবুবকর (রাঃ)-এর ঈমান ও অন্যদের ঈমান সমান’। আমলের ব্যাপারে সকল যুগের শৈথিল্যবাদী ভ্রান্ত মুসলমানরা এই মতের অনুসারী।
খারেজী ও মুরজিয়া দুই চরমপন্থী ও শৈথিল্যবাদী মতবাদের মধ্যবর্তী হ’ল আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত আহলেহাদীছের ঈমান। যাদের নিকট বিশ্বাস ও স্বীকৃতি হ’ল মূল এবং কর্ম হ’ল শাখা। অতএব কবীরা গোনাহগার ব্যক্তি তাদের নিকট কাফের নয় কিংবা পূর্ণ মুমিন নয়, বরং ফাসেক। সে তওবা না করে মারা গেলেও চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়। বস্ত্ততঃ এটাই হ’ল কুরআন ও সুন্নাহর অনুকূলে। এই বিশ্বাসগত পার্থক্যের কারণেই খারেজীপন্থী লোকেরা তাদের দৃষ্টিতে কবীরা গোনাহগার মুসলমানকে ‘কাফের’ মনে করে এবং তাদের রক্ত হালাল গণ্য করে। বর্তমানে ইসলামের নামে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের উত্থানের মূল উৎস এখানেই। স্বার্থবাদী লোকেরা জান্নাতের স্বপ্ন দেখিয়ে এই ভ্রান্ত বিশ্বাসকেই উস্কে দিচ্ছে। তাদের এই ভ্রান্ত বিশ্বাস ইসলামের বিশুদ্ধ আক্বীদার পরিপন্থী। প্রায় সব দেশেই শৈথিল্যবাদী মুসলমানের সংখ্যা বেশী। চরমপন্থীরা এই সুযোগটা গ্রহণ করে এবং মানুষকে নিজেদের দলে ভিড়ায়। আমরা শৈথিল্যবাদী ও চরমপন্থী সকলকে ইসলামের চিরন্তন মধ্যপন্থী আক্বীদায় ফিরে আসার আহবান জানাই।
বর্তমান প্রকাশনায় আমরা সাংগঠনিকভাবে জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এযাবৎ যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি, তার সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি। যদিও এটি সহ সকল প্রকার ভ্রান্ত মতবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সার্বক্ষণিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে এবং থাকবে।
জানা আবশ্যক যে, ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ও তার অঙ্গ সংগঠন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ এবং শিশু-কিশোর সংগঠন ‘সোনামণি’ ও ‘আহলেহাদীছ মহিলাসংস্থা’ একই লক্ষ্যে পরিচালিত। দেশবাসীর প্রতি আমাদের আহবান, ‘আসুন! পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে জীবন গড়ি’। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!