بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহর
অশেষ রহমতে আমরা সঊদী আরবের বিখ্যাত আলেম ও সে দেশের সর্বোচ্চ ফৎওয়া
বোর্ডের আমৃত্যু সদস্য (১৪০৭-২১ হি.) মুহাম্মাদ বিন ছালেহ আল-উছায়মীন
(১৩৪৭-১৪২১ হি./১৯২৯-২০০১ খৃ.) রচিত مِنْ مُشْكِلاَتِ الشَّبَابِ বইটির
বঙ্গানুবাদ ‘যুবকদের কিছু সমস্যা’ সম্মানিত পাঠকবৃন্দের হাতে তুলে দিতে
সক্ষম হ’লাম। ফালিল্লাহি’ল হাম্দ। ইতিপূর্বে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর মুখপত্র ‘তাওহীদের ডাক’-য়ে (১১তম সংখ্যা মার্চ-এপ্রিল’১৩ এবং ২৮তম সংখ্যা সেপ্টেম্বর-অক্টোবর’১৬)
পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকে সম্মানিত
লেখক যুবকদের পরিচয় ও শ্রেণীবিভাগ, তাদের পথভ্রষ্ট হওয়ার মৌলিক কারণ সমূহ ও
তার প্রতিকার, সৃষ্টিকর্তা ও তাক্বদীর সম্পর্কে যুবকদের মনে সৃষ্ট সংশয়ের
জবাব এবং যুবকদের সম্পর্কে কতিপয় হাদীছ উল্লেখ করেছেন।
যুবসমাজ মুসলিম উম্মাহর ভিত্তি ও অমূল্য সম্পদ। কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে মিথ্যা প্রোপাগান্ডার কারণে তাদের একটা বড় অংশ আজ ইসলাম বিমুখ। কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর পথ ছেড়ে তারা আজ নানা বিজাতীয় দর্শন-চিন্তায় মোহগ্রস্ত। নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য ও মর্যাদা সম্পর্কে তারা আত্মবিস্মৃত। অসৎ সঙ্গ, অশ্লীল বই ও বস্ত্তবাদী পত্র-পত্রিকা পাঠ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহজলভ্যতার কারণে তাদের মধ্য থেকে ক্রমশঃ নীতি-নৈতিকতা বিদায় নিচ্ছে। ফলে তারা পরিণত হচ্ছে পশু স্বভাবের ভোগবাদী মানুষে। এই বিরুদ্ধ স্রোতকে লেখক সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন এ বইয়ে।
নবীন অনুবাদক আহমাদুল্লাহ পুস্তকটি আরবী থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন এবং ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম ও আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব এটির সম্পাদনা করেছেন। আমরা তাদের ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণ কামনা করছি। সেই সাথে আশা প্রকাশ করছি যে, বইটি বিদগ্ধ পাঠকবৃন্দের নিকট গ্রহণযোগ্যতা পাবে ইনশাআল্লাহ।
এ বইটি পাঠের মাধ্যমে যুবসমাজের মধ্যে দ্বীনের প্রতি ঐকান্তিক আগ্রহ সৃষ্টি হ’লে এবং তারা সমাজ সংস্কারে কান্ডারীর ভূমিকা পালন করলে আমাদের শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি। আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম জাযা প্রদান করুন- আমীন!
-প্রকাশক
১৪১৯ হিজরীতে হজ্জের সফরে বাদশাহর মেহমান হিসাবে আমাদের মাননীয় পরিচালক সেদেশের গ্রান্ড মুফতী শায়খ বিন বায (১৩৩০-১৪২০ হি.)-এর সাথে সাক্ষাতের পর শায়খ উছায়মীনের তাঁবুতে গিয়ে মিনায় সাক্ষাত করেন এবং তাঁর চৌকির পাশাপাশি চৌকিতে বসে নাতিদীর্ঘ কথোপকথনের সুযোগ লাভে ধন্য হন। -প্রকাশক।
بسم الله الرحمن الرحيم
إن الحمد لله، نحمدُه ونستغفره ونستعينه ونستهديه ونعوذُ بالله من شرورِ أنفسنا ومن سيئاتِ أعمالنا، من يهْدِ اللهُ فلا مضِلَّ له ومن يضلل فلا هادي له- وأشهد أنْ لا إله إلا اللهُ وحده لا شريك له وأشهد أنَّ محمداً عبدُه ورسولُه، صلى الله عليه وعلى آله وأصحابه ومن تبعهم باحسان وسلم تسليما
অতঃপর আধুনিক যুগে যুবসমাজের সমস্যা নিয়ে এই লেখাটি লিখতে আমি আনন্দ বোধ করছি। কেননা কেবল ইসলামী সমাজেই নয় বরং প্রতিটি সমাজে এটি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান যুবসমাজ বুদ্ধিবৃত্তিক ও মানসিকভাবে এমন কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যা তাদেরকে প্রায়শই জীবন সম্পর্কে এক ধরনের উৎকণ্ঠায় নিমজ্জিত করছে। এ দুশ্চিন্তা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া এবং এই হতাশাগ্রস্ত অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য তারা চেষ্টাও করছে যথাসম্ভব। অথচ ধর্ম ও সচ্চরিত্রতা ব্যতীত তাদের এই প্রচেষ্টা কখনই সফল হবে না। যে দু’টি ভিত্তির উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে সমাজ এবং যে দু’টির মধ্যেই নিহিত থাকে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। আর এ দু’টির মাধ্যমেই অবতীর্ণ হয় যাবতীয় কল্যাণ ও সমৃদ্ধি সমূহ এবং দূরীভূত হয় সকল মন্দকর্ম ও বিপদাপদ সমূহ।
একটি দেশ কখনো আবাদ হয় না তার অধিবাসী ছাড়া এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠা পায় না তার অনুসারী ছাড়া। আর যখনই দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় দ্বীনদাররা সচেষ্ট হবে তখনই আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করবেন, তাদের শত্রুদের সংখ্যা যতই বেশী হোক না কেন। মহান আল্লাহ বলেছেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تَنْصُرُوا اللهَ يَنْصُرْكُمْ وَيُثَبِّتْ أَقْدَامَكُمْ وَالَّذِينَ كَفَرُوا فَتَعْسًا لَهُمْ وَأَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ- ‘হে ঈমানদারগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, তাহ’লে আল্লাহ তোমাদেরকে সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পাগুলিকে সুদৃঢ় করবেন। আর যারা কুফরী করেছে, তাদের জন্য রয়েছে দুর্ভোগ এবং তিনি তাদের আমল সমূহকে বিনষ্ট করে দিবেন’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৭-৮)।
যেহেতু দ্বীন তার অনুসারী ব্যতীত প্রতিষ্ঠা পায় না, সেহেতু আমরা যারা মুসলিম এবং ইসলামের পতাকাবাহী তাদের জন্য অত্যাবশ্যক কর্তব্য হ’ল, নিজেদেরকে প্রথমে নেতৃত্ব ও পথপ্রদর্শনের যোগ্য করে গড়ে তোলা এবং শক্তি ও যোগ্যতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠা। আর আমাদের উপর দায়িত্ব হ’ল আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের জ্ঞান অর্জন করা। যা আমাদেরকে কথায়, কর্মে, পথপ্রদর্শনে ও দাওয়াত দানে যোগ্য করে গড়ে তুলবে। যাতে আমরা তীক্ষ্ণধার হাতিয়ার ও স্বচ্ছ আলোকবর্তিকা প্রত্যেক সত্যানুসন্ধী ব্যক্তির জন্য এবং বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে উঠাতে পারি।
এর পরের কাজ হ’ল এই অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা। তাতে যেন আমাদের ঈমান, দৃঢ়বিশ্বাস, একনিষ্ঠতা ও দ্বীনের পূর্ণ অনুসরণ প্রকাশ পায়। কেবল বাগাড়ম্বরই যেন সার না হয়। কেননা কথা যদি কর্মে প্রতিফলিত না হয়, তখন বক্তব্যে কেবল আড়ম্বরই থেকে যায়। নেতিবাচক ফল ছাড়া তাতে আর কিছু পাওয়া যায় না। যেমন আল্লাহ বলেছেন,يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لاَ تَفْعَلُونَ- كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ- ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা কর না?’ ‘আল্লাহর নিকটে বড় ক্রোধের বিষয় এই যে, তোমরা বল এমন কথা যা তোমরা কর না?’ (ছফ ৬১/২-৩)।
এক্ষণে আমাদের সবচেয়ে বড় কর্তব্য হবে শুরু থেকে পথ চলা। যাতে আমরা আমাদের যুবকদের সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে পারি এবং তারা কোন চিন্তা ও কর্মের মধ্যে লিপ্ত আছে তা জানতে পারি। যাতে আমরা তাদের সদগুণাবলী বৃদ্ধি করতে পারি ও বাতিলগুলিকে সংশোধন করে দিতে পারি। কেননা আজকের যুবকরা আগামী দিনের নাগরিক। তারাই হ’ল ভিত্তি, যাদের উপর নির্ভর করছে জাতির ভবিষ্যৎ। এজন্য পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে তাদেরকে সুন্দরভাবে প্রতিপালন করা এবং ভাল ও কল্যাণের প্রতি দিক-নির্দেশনা প্রদান করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। জাতির ভবিষ্যৎ এই যুবসমাজ যখন ঠিক হয়ে যাবে এবং ধর্ম ও সচ্চরিত্রতার শক্তিশালী ভিত্তির উপর যখন তাদের জীবন গড়ে উঠবে, তখন অচিরেই জাতির জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রচিত হবে এবং তারা আমাদের পূর্বসূরীদের যোগ্য উত্তরাধিকারী হবে ইনশাআল্লাহ।