بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সঊদী আরবের প্রখ্যাত ইসলামী বিদ্বান ও সুপ্রসিদ্ধ ফৎওয়া ওয়েবসাইট www.islamqa.com-এর কর্ণধার মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ (জন্ম : রিয়ায, ১৯৬০ খ্রিঃ) রচিত ‘অন্তরের আমল সমূহ’ (سلسلة أعمال القلوب) সিরিজের ৬নং পুস্তক حب الرئاسة -এর বঙ্গানুবাদ ‘নেতৃত্বের মোহ’ বইটি সম্মানিত পাঠকদের হাতে তুলে দিতে সক্ষম হ’লাম। ফালিল্লাহিল হাম্দ। ইতিপূর্বে মাসিক ‘আত-তাহরীক’-য়ে ধারাবাহিকভাবে (এপ্রিল-জুলাই ২০১৫ খ্রিঃ) পুস্তকটির বঙ্গানুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ গুরুত্বপূর্ণ পুস্তকে সম্মানিত লেখক নেতৃত্বের মোহকে ‘সুপ্ত বাসনা’ (الشهوة الخفية) আখ্যা দেয়ার কারণ, নেতৃত্বের গুরুত্ব, নেতৃত্বের প্রতি মোহের প্রকারভেদ, নেতৃত্বের ব্যাপারে একজন মুসলমানের ভূমিকা, নেতৃত্ব প্রকাশের ক্ষেত্র, নেতৃত্বের প্রতি মোহের কারণ ও তার প্রতিকার ইত্যাদি বিষয়ে সংক্ষেপে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন।
নেতৃত্বের মোহ এক কঠিন মানসিক ব্যাধি। ক্ষেত্র বিশেষে তা মদের নেশার চেয়েও মারাত্মক। এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হ’লে আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক ঠুনকো হয়ে যায়। কাজের মধ্যে ইখলাছ বা একনিষ্ঠতা থাকে না। লৌকিকতা ও সুনাম-সুখ্যাতি লাভের বাসনা তার তাক্বওয়াকে বিনষ্ট করে দেয়। এরূপ অবস্থায় মানুষ ন্যায়-অন্যায় বিচার-বুদ্ধি হারিয়ে যেকোন মূল্যে ক্ষমতা লাভের নেশায় বুঁদ হয়ে পড়ে। এমনকি এজন্য নিজ দলের লোককে খুন পর্যন্ত করতেও দ্বিধা করে না। পারস্পরিক হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হয়। ভাইয়ে-ভাইয়ে শত্রুতা দানা বেঁধে উঠে। সদ্ভাব ও সম্প্রীতি তিরোহিত হয়।
ইসলামে নেতৃত্বকে ‘আমানত’ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। নেতৃত্ব চেয়ে নেয়াকে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে এবং পরকালে এটি লজ্জার কারণ হবে বলে সাবধান করা হয়েছে। হাদীছে নেতৃত্বের প্রথম পর্বকে ভৎর্সনা, মধ্যপর্বকে অনুশোচনা এবং শেষ পর্বকে ক্বিয়ামতের দিন লাঞ্ছনা বলা হয়েছে। তবে ন্যায়-নীতির সাথে দায়িত্ব পালন করলে ভিন্ন কথা।
প্রচলিত গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নেতৃত্ব চেয়ে নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ইসলামী দলগুলি ইউসুফ (আঃ)-এর মিসর রাজার নিকট খাদ্য ভান্ডারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব চেয়ে নেওয়াকে দলীল হিসাবে পেশ করেন। অথচ ইউসুফ (আঃ) শাসকের কাছে নিজের যোগ্যতা তুলে ধরে জনকল্যাণের সুযোগ চেয়েছিলেন। তিনি জনগণের কাছে ক্ষমতা চাননি। তাই এটি কখনো ভোট ভিক্ষার দলীল হ’তে পারে না।
জনাব আব্দুল মালেক (ঝিনাইদহ) বইটি সুন্দরভাবে অনুবাদ করে আমাদের কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছেন। আল্লাহ তাকে উত্তম জাযা দান করুন। বইটি ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন’ গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সম্পাদিত ও পরিমার্জিত হয়েছে।
এ বইয়ের মাধ্যমে নেতৃত্ব বিষয়ে ইসলামের নীতি অবগত হয়ে কুরআন ও ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনার গভীর প্রেরণা সৃষ্টি হ’লে আমাদের শ্রম সার্থক হবে বলে মনে করি। আল্লাহ আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা কবুল করুন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম পারিতোষিক দান করুন-আমীন!