আশরাফুল
মাখলূক্বাত মানবজাতির কল্যাণে প্রেরিত বিধান সমূহ প্রচার ও প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে আদম (আঃ) থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ) পর্যন্ত যুগে
যুগে যে অসংখ্য নবী ও রাসূল প্রেরণ করেছেন, তাঁদের মধ্য থেকে মাত্র
পঁচিশজন নবীর নাম আল্লাহ পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করেছেন এবং সত্যের পথে
তাঁদের দৃঢ়চিত্ত সংগ্রামের হৃদয়গ্রাহী কাহিনী প্রয়োজন মত কিছু বর্ণনা করে
মানবতার সামনে সত্য, ন্যায় ও সুন্দরের অনুপম দৃষ্টান্ত ও অনুসরণীয় মানদন্ড
উপস্থাপন করেছেন। এসব কাহিনী এক একটি অবিরাম বিচ্ছুরিত আলোকধারা, যার
প্রতিটি কণায় বিকশিত হয় মানবতার সর্বোচ্চ নমুনা। নবী ও রাসূলগণের
জীবনালেখ্য জানা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য
অপরিহার্য কর্তব্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হ’লেও সত্য যে, বাংলাভাষায় এ
সম্পর্কে বস্ত্তনিষ্ঠ ইতিহাস খুবই দুর্লভ। তাই বিষয়টির গুরুতব উপলব্ধি করে
মাননীয় লেখক প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
বগুড়া যেলা কারাগারে অবস্থানকালে পবিত্র কুরআনের তাফসীর ও মিশকাতুল
মাছাবীহের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা রচনার ফাঁকে ফাঁকে এই অমূল্য পান্ডুলিপিটি
সমাপ্ত করেন। মুহতারাম লেখক এই ইতিহাস রচনায় সাধ্যমত কেবল বিশুদ্ধ
সূত্রগুলির উপর নির্ভর করেছেন এবং যাবতীয় ইস্রাঈলী বর্ণনা ও সমাজে প্রচলিত
নানা উপকথা ও ভিত্তিহীন কেচ্ছা-কাহিনী থেকে সর্বতোভাবে মুক্ত থাকার চেষ্টা
করেছেন। তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান সংযোজন হ’ল আম্বিয়ায়ে কেরামের জীবনী থেকে
বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে শিক্ষণীয় বিষয়সমূহ পাঠকের সামনে তুলে ধরা।
মার্চ’১০-য়ে ১৩ জন নবীর জীবনী নিয়ে ১ম খন্ড এবং ডিসেম্বর’১০-য়ে ১১ জন নবীর
জীবনী নিয়ে ২য় খন্ড প্রকাশিত হওয়ার পর মার্চ’১৫-তে শেষনবী মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-এর জীবনী নিয়ে ৩য় খন্ড বের হ’ল। প্রচুর সাংগঠনিক ব্যস্ততার মধ্যে
দেরীতে হ’লেও মাননীয় লেখক যে সমৃদ্ধ ও পরিমার্জিত রূপে এই অমূল্য গ্রন্থটি
সমাপ্ত করেছেন এবং আমরা তা পাঠক সমাজের হাতে তুলে দিতে পারছি, সেজন্য
আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি।
আমরা দৃঢ়ভাবে আশাবাদী যে, এর মাধ্যমে পাঠক সমাজ নবী জীবনে ইসলামের বাস্তব অনুশীলনের সুস্পষ্ট রূপরেখা অনুধাবন করতে পারবেন এবং মানবজাতির প্রাচীন ইতিহাসের পাদপীঠে নিজেদেরকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করতে সক্ষম হবেন। সাথে সাথে নবীগণের উন্নত জীবনকে উত্তম আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করার প্রেরণা লাভ করবেন।
২য় সংস্করণে সঙ্গত কারণেই কিছু সংযোজন-বিয়োজন ঘটেছে। সবচেয়ে বড় সংযোজন হ’ল গ্রন্থের শেষে দু’টি পরিশিষ্ট যুক্ত হয়েছে। প্রথমটিতে রাসূল (ছাঃ)-এর পরিত্যক্ত বস্ত্তসমূহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের সমষ্টি একত্রে পেশ করা হয়েছে। দ্বিতীয়টিতে ‘প্রসিদ্ধ কিন্তু বিশুদ্ধ নয়’ শিরোনামে পৃথক একটি তালিকা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া প্রতিনিধিদলের সংখ্যা এবার ৩০টির স্থলে ৩৭টি হয়েছে। আশা করি পাঠক মহল এর দ্বারা বেশী উপকৃত হবেন।
পরিশেষে সুলিখিত এ গ্রন্থটির বিজ্ঞ রচয়িতার প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং প্রকাশনার সাথে জড়িত সকলকে অসংখ্য মোবারকবাদ জানাচ্ছি। আল্লাহ মাননীয় লেখক এবং তাঁর পিতা-মাতা ও পরিবারবর্গকে ইহকালে ও পরকালে সর্বোত্তম পারিতোষিক দান করুন- আমীন!