بسم الله الرحمن الرحيم
‘কারাস্মৃতি’
বলতেই বন্দীজীবনের মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা সমূহের বর্ণনা বুঝায়। আল্লাহ
মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। সে কখনো আবদ্ধ থাকতে চায় না। তাই তাকে
পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বন্দী রাখাটাই বড় শাস্তি। দু’বেলা
দু’মুঠো খেতে পেলেও স্বাধীনতা না থাকায় সে ভিতর থেকে মরে যায়। তার স্বাধীন
চেতনা ক্রমে বিলুপ্ত হয়। সম্ভবতঃ এরূপ মন্দ চিন্তা থেকেই আধুনিক বিশ্বের
কপট চিন্তাবিদরা বিনা বিচারে মেয়াদ বিহীন হাজতী প্রথা, রিম্যান্ডে নির্যাতন
প্রথা, যাবজ্জীবন কারাদন্ডের প্রথা প্রভৃতি নিপীড়নমূলক বিধানসমূহ চালু
করেছে। ফলে কারাবন্দী মানুষগুলিকে তাদের জৈবিক ও মানবিক চাহিদা থেকে যেমন
বঞ্চিত করা হয়, তেমনি স্ব স্ব পরিবার, সমাজ ও দেশের প্রতি অপরিহার্য
দায়িত্ব পালন থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়। এগুলি যে মৌলিক মানবাধিকারের চরম
লংঘন, একথা চিন্তাশীল মাত্রই বুঝতে পারেন।
বন্দী রাখার উদ্দেশ্য যদি সংশোধন হয়, তবে তার কোন ব্যবস্থা কারাগারে আছে কি? অনুতপ্ত ও সংশোধিত হলে তাকে মুক্তি দেওয়ার বা সাজা কমানোর কোন বিধান আছে কি? আদালতে বাদী ও বিবাদীকে সরাসরি জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে যা দু’দিনেই মিটে যাওয়া সম্ভব, সেটা প্রচলিত ওকালতি ব্যবস্থা ও আদালতের দীর্ঘসূত্রী প্যাঁচে ফেলে বিনষ্ট করা কি অযৌক্তিক ও অমানবিক নয়? এটি আরও অমানবিক হয়, যখন স্বয়ং সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে তার নাগরিকদের হয়রানি করে। অতঃপর জনগণের ট্যাক্সের পয়সা এই অন্যায় কাজে ব্যয় করে। আরও মর্মান্তিক হয়, যখন এই মিথ্যার পিছনে পুরা বিচার বিভাগ নিয়োজিত হয় ও তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে বন্দীরা কারাগারে ধুঁকে ধুঁকে মরে। সেকারণ অভিজ্ঞ জেলারদের মতে কারাগারের ৯০ শতাংশ বন্দী নিরপরাধ।
এমনই এক সরকারী যুলুমের শিকার হয়েছিল ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর নিরপরাধ নেতৃবৃন্দ। অবশেষে আল্লাহর রহমতে মযলূম বিজয়ী হয়েছে ও যালেম পরাজিত হয়েছে। কিন্তু সিস্টেমের পরিবর্তন হয়নি। তাই আমরা ইসলামের আলোকে দেশের অত্যাচার মূলক আইন ও বিচার ব্যবস্থা এবং কারাবিধি সমূহের আশু পরিবর্তন কামনা করি।
সাড়ে ১৬ মাসের কারাস্মৃতিতে লেখক সহ সংগঠনের সে সময়কার কেন্দ্রীয় তিন নেতার মর্ম কাহিনীর কিছু নমুনা বর্ণিত হয়েছে। সংগঠনের ‘আমীর’ ও অন্যান্য নির্যাতিতদের কাহিনী এতে যুক্ত হয়নি। সুযোগ হ’লে পরবর্তীতে সেগুলি একত্রিত করা যাবে। সে সময়কার কথিত সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, পত্র-পত্রিকা ও মিডিয়া সমূহের এক চোখা ভূমিকা সমূহ এখানে যোগ হয়নি। ভবিষ্যৎ বংশধররা সেগুলি না জানলেই বরং ভাল থাকবে।
নির্যাতিত লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ যে, তিনি শ্রম স্বীকার করে ফেলে আসা অনেক অজানা তথ্য পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন। যদি এর মাধ্যমে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র কর্মীরা কিছু পাথেয় খুঁজে পান, তাহ’লে তাঁর এই শ্রম স্বার্থক হবে বলে মনে করি। কপট, শৈথিল্যবাদী, চরমপন্থী ও বিভেদকামীদের অপচেষ্টা থেকে আল্লাহ ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’কে রক্ষা করুন- আমীন!