بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وحده والصلاة والسلام على من لا نبيّ بعده وعلى آله وصحبه ومن تبعهم بإحسان إلي يوم الدين وبعد
হে ছায়েম অনুধাবন করুন!
ওহে আত্মভোলা মানুষ! দুনিয়ার ব্যস্ততায় তোমার জীবনের গাড়ী পাথেয়শূন্য অবস্থায় এগিয়ে চলেছে তীব্র গতিতে প্রতি সেকেন্ডে ৩ লক্ষ কিলোমিটার বেগে। ভেবেছ একটু পরেই পাথেয় ভরব। কিন্তু বিরতির সিগন্যাল যে তোমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। যেমনি ওটা জ্বলে উঠবে, তেমনি থেমে যাবে তোমার জীবনের গাড়ী। আর পাথেয় ভরার সুযোগ তুমি পাবেনা। তাই ভাগ্যক্রমে যদি রামাযানের স্টেশন পেয়ে যাও, তবে সেখান থেকে ভরে নাও তোমার বগি। হ’তে পারে এটাই তোমার জীবনের শেষ স্টপেজ। একবার ভেবে দেখ, গতবার যারা তোমার সাথে ছিয়াম রেখেছে, তারাবীহর জামা‘আতে যোগ দিয়েছে, তোমার সাথে ইফতার করেছে, একসাথে ঈদের জামা‘আতে যোগদান করেছে, এ বছর তারা কি আছে? তারা ইতিমধ্যে তাদের জীবনের শেষ স্টপেজে পৌঁছে বিদায় হয়ে গেছে। ফিরে গেছে সেখানে, যেখান থেকে তারা মায়ের গর্ভে এসেছিল। বহু আকাঙ্খা ছিল বড় ধরনের সঞ্চয় সাথে নেবার। কিন্তু দুনিয়াবী ব্যস্ততায় সুযোগ হয়নি। আজ কাল করতে করতে হঠাৎ চোখের আলো নিভে গেছে। জীবনের স্পন্দন থেমে গেছে। কারু কাছ থেকে বিদায় নেবারও সময় পায়নি। এটা কি তোমার হ’তে পারেনা?
একবার ভেবে দেখ, তোমার জীবনকে ও তোমার পরিবারকে তুমি কত ভালবাস! তোমাকে যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি তোমাকে কি তার চাইতে বেশী ভালবাসেন না? তুমি তো অসহায় একটা শিশুরূপে দুনিয়ায় এসেছিলে। এখন তুমি শক্ত-সমর্থ পূর্ণদেহী মানুষ। কিভাবে হ’লে? কে তোমাকে দেড় ফুট থেকে সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা করলেন? তুমি তো কেবল পেটের মধ্যে খাদ্য প্রবেশ করাও। কে সেটা সেখানে হযম করিয়ে রক্ত-মাংস ও অস্থি-মজ্জায় পরিণত করেন? কে তা থেকে তোমার দেহে শক্তি ও মস্তিষ্কে মেধা যোগান? যিনি তোমাকে অলক্ষ্যে থেকে এমন ভালবাসা দিয়ে তোমাকে পরম আদরে গড়ে তুলেছেন, আলো দিয়ে, বায়ু দিয়ে, ছায়া দিয়ে, বৃষ্টি দিয়ে, খাদ্য দিয়ে তোমাকে পুষ্ট করে তুলেছেন, জীবন সংগ্রামে তোমাকে বিজয়ী হবার প্রেরণা দিচ্ছেন, সফলকাম করছেন, তার কথা কি একবার ভেবে দেখেছ? তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য তিনি ইবলীসকে সৃষ্টি করেছেন ও তোমাকে তার প্ররোচনা থেকে সাবধান করেছেন। কিন্তু তুমি কি তার থেকে সাবধান হয়েছ? আল্লাহ চান তোমার স্বতঃস্ফূর্ত আনুগত্য। জেনে-বুঝে ভীতি ও শ্রদ্ধাপূর্ণ ইবাদত। অন্যান্য প্রাণীর মত বাধ্যগত ইবাদত তিনি তোমার কাছে চান না। কেননা তুমি জ্ঞান ও বিবেকসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ জীব। তোমার স্বতঃস্ফূর্ত ইবাদত তাই তাঁর নিকটে সবচেয়ে প্রিয়। সেই ইবাদত কি তুমি তাঁর জন্য পেশ করেছ?
তিনি তোমাকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন। তিনি চাননা তোমাকে জাহান্নামের জ্বলন্ত হুতাশনে দগ্ধ করতে। তাই তোমাকে বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন পথ-পন্থা তোমার সামনে পেশ করেছেন। তার অন্যতম প্রধান পথ হ’ল রামাযানের একমাস ছিয়াম সাধনা। অতএব জাঁকজমকপূর্ণ জীবনের সুসজ্জিত তেজিয়ান ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে বছরের এই বিশেষ মাসটির রহমতের দরিয়ায় ডুব দাও। তুলে নাও রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মণি-মুক্তা সমূহ। তাহ’লে মৃত্যুর পরেই তোমার সামনে উদ্ভাসিত হবে জান্নাতের সুসজ্জিত দৃশ্য। যা কোন চোখ কখনো দেখেনি, কান কখনো শোনেনি, হৃদয় কখনো কল্পনা করেনি। ইবলীস বাহিনী চাইবে তোমাকে এ মাসে অধিক ব্যবসায়ে ব্যস্ত রাখতে। তোমার সামনে লোভনীয় অফার দিবে। বিবেক একটু দুর্বল করলেই তুমি পেয়ে যাবে দুনিয়াবী বিলাসের সম্ভার। হ্যাঁ, এখানেই তোমার পরীক্ষা। তোমার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তোমাকে দেখছেন অলক্ষ্যে থেকে, তুমি এখন কি কর দেখার জন্য। জিনরূপী শয়তান তোমার মধ্যে খটকা সৃষ্টি করবে। মানুষরূপী শয়তান তোমাকে প্রতারণায় ভুলাবে। তোমার মধ্যকার বিবেক তোমাকে ধিক্কার দিবে। প্রশান্ত আত্মা তোমাকে উপদেশ দিবে ও আল্লাহর পথ দেখাবে। মন, বিবেক ও প্রশান্ত আত্মার মধ্যে তুমি কাকে অগ্রাধিকার দিবে, সেটাই তো আল্লাহ দেখছেন। যিনি তোমার গর্দানের প্রাণশিরার চাইতেও নিকটবর্তী আছেন। কিন্তু তোমার চর্মচক্ষু তাঁকে দেখতে পাবে না। হৃদয়ের চক্ষু দিয়ে একবার তাঁকে অনুধাবন কর। হ্যাঁ, যখন তুমি তাঁকে অনুধাবনে সক্ষম হবে, তখুনি শয়তানকে থুক মেরে তুমি ফিরে আসবে আল্লাহর পথে। যেভাবে ফিরে এসেছিলেন ইউসুফ (আঃ) তরুণ বয়সে যুলায়খা থেকে। ফিরে এসেছিল গুহায় আটকে পড়া যুবক তার জীবনের এক চরম পরীক্ষার মুহূর্তে। শয়তানকে হটাতে পারলে অবশ্যই তুমি ফিরে আসবে সেই সরল পথে, যার সন্ধান তুমি পেয়েছ পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে।
এসো ফরয ও নফল ছিয়ামের ঢাল দিয়ে প্রবৃত্তির চাহিদা সমূহকে প্রতিরোধ করি। জাহান্নামের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করি। মনে রেখ, নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তোমার সময়। এরপরে আর সময় পাবেনা। তাই রামাযানের এই সুযোগে এসো আল্লাহর রহমতের দরিয়া থেকে আখেরাতের কলস ভরে নেই। ক্বিয়ামতের দিন হাসিমুখে আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়াবার পাথেয় সঞ্চয় করি। ভেবে দেখ, কারু প্রতি কোনরূপ যুলুম করেছ কি? কারু সম্মানে আঘাত দিয়েছ কি? কারু সাথে অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছ কি? আল্লাহ বা বান্দার কোন হক নষ্ট করেছ কি? যদি করে থাক, তাহ’লে আজই মিটিয়ে নাও। বলোনা যে, কাজটি কালকে করব (মুসলিম হা/২০৪; মিশকাত হা/৫৩৭৩)।
অতএব হে ছায়েম! খালেছ তওবা করে আখেরাতের ডালি ভরতে শুরু কর। ঐ শোন প্রতি রাতে তোমার প্রতিপালকের আহবান, হে কল্যাণের অভিযাত্রী! এগিয়ে চলো। হে অকল্যাণের অভিসারী! বিরত হও! (তিরমিযী হা/৬৮২; ইবনু মাজাহ হা/১৬৪২; মিশকাত হা/১৯৬০)। তুমি কি শুনতে পাও এ আহবান ধ্বনি? তাহ’লে আর দেরী করোনা। অলসতার চাদর ছেড়ে উঠে দাঁড়াও। শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা কর। সকল নেকীর কাজে প্রতিযোগিতা কর। ‘তাসনীম’ ঝর্ণার মিশ্রণ যুক্ত জান্নাতের মোহরাংকিত শরাব পানের প্রতিযোগিতায় ঝাঁপিয়ে পড়।