গল্প, কবিতা,
সঙ্গীত ইত্যাদি শিল্প ও সাংস্কৃতিক উপকরণ মানুষের স্বভাবজাত অন্তঃক্রিয়ার
এক চিরন্তন অংশ। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকল সমাজ ও সংস্কৃতির একটি বিরাট অংশ
দখল করে রয়েছে চিত্তবিনোদনের এ সকল বিমূর্ত উপকরণ। যা মানুষকে নিরন্তর
কর্মপ্রেরণা যোগায়, সভ্যতা ও মননশীলতা শেখায়, জীবনকে অনেক অর্থপূর্ণ করে
তোলে। ইসলামের দুই অভ্রান্ত সত্যের উৎস পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে মানব
জীবন পরিচালনার পথ ও পদ্ধতি প্রদর্শিত হওয়ার সাথে সাথে নানা সামাজিক ও
সাহিত্যিক উপকরণের রসদও যোগান দেয়। তাই দেখা যায় পূর্ববর্তী জাতিসমূহের
কার্যক্রম ও জীবন-যাপন পদ্ধতি সম্পর্কে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে বহু
কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। যার একমাত্র উদ্দেশ্য জ্ঞান হাছিল করা ও তা থেকে
উপদেশ গ্রহণ করা। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘অতএব তুমি কাহিনী
বর্ণনা কর, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে’ (আ‘রাফ ১৭৬)। আল্লাহ আরো
বলেন, ‘তাদের এ কাহিনীগুলোতে অবশ্যই বুদ্ধিমানদের জন্য রয়েছে শিক্ষা, এটা
কোন বানানো গল্প নয়, বরং তাদের পূর্ববর্তী কিতাবের সত্যায়নকারী এবং প্রতিটি
বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ। আর হেদায়াত ও রহমত ঐ কওমের জন্য যারা বিশ্বাস
স্থাপন করে’ (ইউসুফ ১১১)। অন্য আয়াতে তিনি বলেন, ‘এতে তোমার নিকট এসেছে সত্য, মুমিনদের জন্য শিক্ষা ও স্মরণিকা’ (হূদ ১২০)।
এ সকল আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয় যে, পূর্ববর্তীদের কাহিনীসমূহ
জানা এবং মানুষের কাছে তা প্রচার করা কেবল প্রয়োজনীয়ই নয় বরং অপরিহার্য।
এতে একদিকে যেমন চিত্তবিনোদন হয়, অন্যদিকে তেমনি খুলে যায় শিক্ষা ও উপদেশ
গ্রহণের একটি উপভোগ্য দুয়ার।
পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছে মানবেতিহাসের এমন বহু ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যাতে মানুষের জন্য অপরিমেয় জ্ঞান ও উপদেশভান্ডার লুকিয়ে রয়েছে। বাংলাভাষী পাঠকরা এসকল ঘটনা বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন গ্রন্থে হয়তবা ইতিমধ্যেই পাঠ করেছেন। কিন্তু সেসব ঘটনা অনেক সময় বিকৃত আকারে বর্ণনা করা হয়েছে অথবা জাল-যঈফ কাহিনী মিশিয়ে চটকদার রূপ দেয়া হয়েছে। এমতবস্থায় সুধী পাঠককে ছহীহ হাদীছে তথা বিশুদ্ধে সনদে বর্ণিত গল্প ও কাহিনীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন গবেষণা বিভাগ’ ‘হাদীছের গল্প’ গ্রন্থটি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়। এখানে সংকলিত ৩০টি গল্পের অধিকাংশই ইতিপূর্বে ‘মাসিক আত-তাহরীক’-য়ে প্রকাশিত হয়েছে। বলা বাহুল্য যে, হাদীছে বর্ণিত কাহিনীগুলো হুবহু অনূদিত হওয়ায় পাঠক হয়ত গাল্পিক ভাবধারায় কিছুটা ঘাটতি অনুভব করতে পারেন, তবে তা মূল উদ্দেশ্য তথা উপদেশ গ্রহণে কোন বাধার সৃষ্টি করবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস। এজন্য পাঠকের সুবিধার্থে প্রতিটি গল্পের শেষেই শিক্ষণীয় বিষয়গুলো আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ভিন্নধর্মী এই গল্পগ্রন্থটি পাঠকের কাছে সমাদৃত হবে বলে আমরা আশাবাদী।
বইটি প্রকাশনার সাথে জড়িত হা.ফা.বা. গবেষণা বিভাগসহ সকলকে আমরা আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং আল্লাহর নিকটে উত্তম জাযা কামনা করছি।