সূদ হ’ল পুঁজিবাদী অর্থনীতির
সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। পৃথিবীর আদিকাল থেকে সূদ ভিত্তিক ঋণদান ব্যবস্থা চলে
আসছে। যার মন্দ প্রেরণা হচ্ছে ঋণ গ্রহীতাকে বাগে পেয়ে শোষণ করা। এর ফলে
বিপদগ্রস্ত মানুষকে ঋণ দিয়ে উপকার করার মানবিক তাকীদ ধ্বংস হয়ে যায়।
সকল নবী ও রাসূল এবং মুসলিম-অমুসলিম সকল মনীষী যুগে যুগে সূদকে শোষণের হাতিয়ার হিসাবে চিহ্নিত করেছেন এবং সূদ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে উপদেশ দিয়েছেন। মদীনায় ইসলামী খিলাফতের সময়ে মানুষ প্রথম সূদবিহীন ইসলামী অর্থনীতির সুফল ভোগ করে। দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রাঃ)-এর সময়ে আরবের কোথাও যাকাত নেওয়ার মত গরীব এবং হকদার খুঁজে পাওয়া যেত না। আজও সেটা সম্ভব যদি জনগণ সচেতন হয় এবং সেভাবে রাষ্ট্রীয় প্রশাসন ও অর্থনীতিকে ঢেলে সাজানো হয়।
বাংলাদেশের জনগণকে সূদের বিরুদ্ধে সচেতন করে তোলার জন্যই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। এজন্য আমরা দেশের খ্যাতনামা ইসলামী অর্থনীতিবিদ এবং বিগত ২৫ বছর যাবত ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের শরী‘আহ কাউন্সিলের মাননীয় সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক প্রফেসর শাহ মুহাম্মদ হাবীবুর রহমানের মূল্যবান তিনটি নিবন্ধ, যা ইতিপূর্বে মাসিক আত-তাহরীকে (অক্টোবর ২০০১, মার্চ ও মে ২০০৮) সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল, তা লেখক কর্তৃক পুনরায় সংশোধন করে বই আকারে বের করতে পেরে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করছি। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।
পবিত্র কুরআনের সাতটি আয়াত এবং চল্লিশটিরও বেশী হাদীছ দ্বারা সূদের নিষিদ্ধতা প্রমাণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, সূদের অর্থ যতই বৃদ্ধি পাক না কেন, তার শেষ পরিণতি হ’ল দরিদ্রতা (আহমাদ, সনদ ছহীহ)। অথচ বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে সূদী অর্থনীতি চালু রয়েছে। সূদের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে একদিকে সরকার পিটাচ্ছে ও জেল খাটাচ্ছে, অন্যদিকে গ্রাম্য সূদী মহাজন ও এনজিও-র লোকেরা ঘরের টিন খুলে নিয়ে যাচ্ছে। কেউবা ঋণভারে জর্জরিত ক্ষুধার্ত ব্যক্তিটিকে পিটিয়ে হত্যা করে লাশ গাছে বেঁধে রেখে অন্যদের ভয় দেখাচ্ছে। এসব দুনিয়াবী যুলুমের বিরুদ্ধে জনগণকে সচেতন করে তোলা এবং পরকালীন শাস্তি সম্পর্কে ঈমানদারগণকে সাবধান করার উদ্দেশ্যেই মূলতঃ আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস। যদি এর দ্বারা সরকার ও জনগণ হুঁশিয়ার হন এবং সূদ থেকে বিরত হন এবং সর্বোপরি আল্লাহ আমাদের এ নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা কবুল করেন, তবেই আমাদের শ্রম সার্থক মনে করব। মাননীয় লেখক লেখাটিকে ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ হিসাবে ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন’কে দান করেছেন। আল্লাহ তাঁকে ইহকাল ও পরকালে উত্তম জাযা দান করুন- আমীন!